এক মাদরাসার মুহতামিম সাহেব মাদরাসায় এসে দেখেন ছাত্ররা সবাই কান্না কাটি করছে। মুহতামিম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কাঁদছো কেন ? ছাত্ররা বললো হুজুর আমাদের নাজেম সাহেব হুজুরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। মুহতামিম সাহেব খোজ নিয়ে জানতে পারলেন, তাকে গ্রেফতার করে কোর্টে নিয়ে গেছে। তাই তিনি কোর্টে গিয়ে দেখলেন নাজেম সাহেব হুজুর কোর্টের বিচারপতির কাঠগড়ায় দাড়িয়ে আছেন।
মুহতামিম সাহেব বিচারপতিকে বললেন, উনি আমার মাদরাসার শিক্ষক, খুব ভাল মানুষ, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বন্দী হয়েছেন। তিনি আরো বললেন হাকিম সাহেব, আমরা কওমী মাদরাসায় কোন রকম ডাল ভাত খেয়ে পড়ি ও পড়াই, তাই আমাদের পকেটে অতিরিক্ত টাকা পয়সা থাকে না। অতএব উকিল ফি দিয়ে উকিল নিযুক্ত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমি নিজেই ওকালতী করার অনুমতি প্রার্থনা করছি।
একজন সিনিয়র আইনজীবী দাড়িয়ে বললেন, আপনি ওকালতী পড়েননি, আপনার এল এল বি এর সনদ নেই, আপনি কি করে ওকালতী করতে চান ?
মুহতামিম সাহেবের একই কথা, উকিল ফি দিয়ে উকিল নিযুক্ত করার টাকা নেই, তাই আমিই ওকালতী করার অনুমতি চাই।
উকিল সাহেব এবার বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন আপনি তাকে এ অনুমতি দিতে পারেননা। তবে আমি তাকে একটা প্রশ্ন করবো, সে যদি এক কথায় শুধু হ্যাঁ অথবা না এর মাধ্যমে এর উত্তর দিতে পারে, তাহলে অনুমতির বিষয়টা বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যথা অনুমতির প্রশ্নই আসে না।
মুহতামিম সাহেব বললেন, সব প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ এবং না এর মাধ্যমে দেয়া যায় না। কিছু কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর ব্যাখ্যা সহকারে দিতে হয়।
উকিল সাহেব বললেন, না পারলে আপনাকে অনুমতিও দেয়া হবে না।
অগত্যা মুহতামিম সাহেব বললেন, এই শর্ত কি শুধু আমার বেলায় না সবার জন্য ?
উকিল সাহেব বললেন হ্যাঁ এটা সবার জন্য প্রযোজ্য।
তখন মুহতামিম সাহেব বললেন ঠিক আছে তাহলে আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই আপনি শুধু হ্যাঁ অথবা না এর মাধ্যমে উত্তর দিতে পারবেন তো ?
উকিল সাহেব বললেন, না পারার কোন প্রশ্নই আসে না। আপনি প্রশ্ন করুন।
হুজুর বললেন যদি না পারেন তাহলে কি হবে ?
উকিল সাহেব আবারো বললেন, না পারার কোন কথাই এখানে নেই আপনি প্রশ্ন করুন।
হুজুর এর পরে আস্তে আস্তে বলছিলেন, আমি শুনেছিলাম আপনার পিতা প্রতিদিন মাসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের জুতা চুরি করতেন, তো সে অভ্যাসটা কি এখনো আছে না বন্ধ করে দিয়েছে ?
উকিল সাহেব এবার চুপ হয়ে গেলেন। হ্যাঁ ও বলেননা, আর না ও বলেননা। বরং তার দুচোখ দিয়ে টপ টপ করে অশ্রু ঝরা শুরু হয়ে গেল। কারনঃ- হ্যাঁ বললে প্রমান হয়ে যায় যে, সে একজন জুতা চোরের সন্তান। আর না বললে প্রমাণ হয়, সে একজন সাবেক জুতা চোরের সন্তান। তাই সে নিরব।
তখন বিচারপতি সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, কিরে উকিল সাহেব আপনি কি লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেলেন নাকি ?
উকিল সাহেব জ্বি না আমি লজ্জা পাইনি।
জজ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আপনি কাঁদছেন কেন ?
উকিল সাহেব বললেন, আমার বিশ বছর আগের একটা কথা মনে পড়ে গেছে তাই কাঁদছি। কি কথা ? আমি বিশ বছর আগে একটা হাদীস পড়ে এই বলে উপহাস করেছিলাম যে, এমন অবাস্তব কথাও কি হদীসে থাকতে পারে ?
জজ সাহেব আবারও জিজ্ঞেস, কি ছিল সে হাদীসে ?
উকিল সাহেব বললেন, তাতে ছিল, কিয়ামতের দিন সর্বশ্রেষ্ঠ আদালত কায়েম হবে কিয়ামতের ময়দানে। আর সেই আদালতের বিচারপতি হবেন সয়ং আল্লাহ তা’আলা। আর সেই আদালতের উকিল হবেন এই সব মোল্লা মৌলবীরা। এবং অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্ত করে তারা জান্নাতে পাঠাবে। এটা পড়ে আমার উপহাস করার কারন ছিল, যারা কোন লেখা পড়া জানেনা, কোন ওকালতী পড়েননি, কোনদিন কোর্টে দাড়ায়নি, সেই তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ আদালতে ওকালতী করবে। আর অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্ত করে জান্নাত বাসী করে দিবে। এমন অশার ও অবাস্তব কথা ও হাদীসে থাকে ? মাননীয় বিচারপতি সাহেব, আজকে আমার সেই হাদীসটা বুঝে এসেছে, তাই কাঁদছি। আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমাদের সারা জীবনের ওকালতীর জ্ঞান মনে হয় আল্লাহ তা’আলা তাদের দুই চোয়ালের মাঝখানে দান করেছেন।
(দিলাওয়ার সাহেবের অমূল্য বয়ান থেকে। সামান্য পরিমার্জিত। সবাই গল্প টা পড়ে চলে যায় কেউ শেয়ার করেনা ভাইজান ভালো কিছু শেয়ার করলে ইনশাআল্লাহ আশা করা যায় আপনি ও সওয়াব পাবেন।)