নতুন শিশুর জন্ম একটি পরিবারের জীবনে সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত। কিন্তু আনন্দের সাথে সাথে বাবা–মায়ের মনে অনেক প্রশ্নও জন্ম নেয়—কীভাবে নবজাতকের যত্ন নিতে হবে? কখন গোসল করাতে হবে? কীভাবে খাওয়াতে হবে? এসব প্রশ্নের উত্তরই পাওয়া যাবে আজকের এই গাইডলাইনে, যা শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শের আলোকে তৈরি।
কেন নবজাতকের বিশেষ যত্ন জরুরি?
নবজাতক শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তাই তাদের সংক্রমণ, ত্বকের সমস্যা বা পেটের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সঠিক যত্ন না নিলে ছোট একটি সমস্যা বড় আকার ধারণ করতে পারে। এজন্যই জন্মের প্রথম ছয় মাস শিশুর যত্নকে বলা হয় “গোল্ডেন টাইম”।
নবজাতকের যত্নের গুরুত্বপূর্ণ দিক
১. বুকের দুধ খাওয়ানো
- জন্মের পর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।
- ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের দুধ দিতে হবে।
- বুকের দুধ শিশুর জন্য প্রাকৃতিক ভ্যাকসিনের মতো কাজ করে।
২. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
- শিশুর কাপড় প্রতিদিন পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে হবে।
- হাত না ধুয়ে কখনো শিশুকে ধরবেন না।
- শিশুর নখ ছোট রাখতে হবে, যাতে আঁচড় না লাগে।
৩. গোসল ও ত্বকের যত্ন
- জন্মের পর প্রথম কয়েকদিন শিশুকে গোসল না করিয়ে ভেজা কাপড়ে মুছে দিতে হবে।
- সপ্তাহে ২–৩ বার হালকা গরম পানিতে গোসল করানো যেতে পারে।
- শিশুর জন্য কেমিক্যাল–মুক্ত বেবি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা ভালো।
৪. ঘুম ও পরিবেশ
- নবজাতক দিনে প্রায় ১৬–১৮ ঘণ্টা ঘুমায়।
- শিশুর ঘুমানোর স্থান সবসময় পরিষ্কার, আরামদায়ক ও নীরব হতে হবে।
- শিশুর কাছে ধূমপান বা তীব্র গন্ধ এড়িয়ে চলা জরুরি।
৫. টিকা দেওয়া
- জন্মের পর থেকেই জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি অনুযায়ী টিকা দেওয়া শুরু করতে হবে।
- টিকা শুধু রোগ প্রতিরোধই করে না, ভবিষ্যতে মারাত্মক অসুখ থেকেও রক্ষা করে।
৬. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- শিশুর ওজন ও উচ্চতা মাসে একবার মাপা জরুরি।
- নবজাতকের মধ্যে যদি খাওয়ার সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত কান্না বা জন্ডিস দেখা দেয় তবে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।
বাবা–মায়ের জন্য ডাক্তারদের অতিরিক্ত টিপস
- শিশুকে কখনো ঝাঁকানো যাবে না, এতে মস্তিষ্কে আঘাত লাগতে পারে।
- শিশুকে সবসময় পিঠের ওপর শোয়াতে হবে, এতে হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি (SIDS) কমে।
- শিশুর কাছে কখনো ছোট বস্তু রাখবেন না, এতে শ্বাসরোধের ঝুঁকি থাকে।
সাধারণ সমস্যায় করণীয়
১. কাশি বা হালকা ঠাণ্ডা: শিশুকে গরম কাপড়ে মুড়িয়ে রাখুন এবং বুকের দুধ চালিয়ে যান।
২. পেট ব্যথা বা গ্যাস: বুকের দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে কাঁধে নিয়ে হালকা চাপড়ে ঢেঁকুর তুলতে হবে।
৩. জন্ডিস: অনেক শিশুর জন্মের পর ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যায়। এটি সাধারণত ১–২ সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়। তবে বেশি হলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।
ট্রাস্টেড সোর্স
👉 World Health Organization (WHO) – Newborn Care
প্রশ্ন–উত্তর (Q&A)
প্রশ্ন ১: নবজাতককে কয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে?
উত্তর: প্রথম ছয় মাস কেবলমাত্র মায়ের দুধই দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ২: নবজাতককে কখন গোসল করানো যায়?
উত্তর: জন্মের পর প্রথম কয়েকদিন গোসল না করিয়ে ভেজা কাপড়ে মুছে দিতে হবে।
প্রশ্ন ৩: শিশুর টিকা কবে থেকে শুরু হয়?
উত্তর: জন্মের পর থেকেই টিকা দেওয়া শুরু হয়, যেমন BCG, পোলিও।
প্রশ্ন ৪: নবজাতক দিনে কত ঘণ্টা ঘুমায়?
উত্তর: সাধারণত ১৬–১৮ ঘণ্টা ঘুমায়।
উপসংহার
নবজাতকের যত্ন নেওয়া যেমন আনন্দের তেমনি দায়িত্বের। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে চললে শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব। মনে রাখবেন, শিশুর প্রতিটি ছোট বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে দেরি না করে শিশুকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
wfzykxrtjtwvknzsiovpoyodqtwdkv
pgppxeknzmtnfwsfueiqfwqmhzxpjr