মৌসুমী জ্বর থেকে সুরক্ষা পেতে যা করবেনঃ
মৌসুমী জ্বর বা সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা হলো একটি সাধারণ কিন্তু কখনো কখনো গুরুতর হতে পারে এমন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ। এটি বার্ষিকভাবে সারা বিশ্বে প্রচলিত থাকে, যা হঠাৎ উচ্চ তাপমাত্রা, কফ, মাথা ব্যথা, পেশী ও সংযোগস্থল ব্যথা, গলা ব্যথা এবং নাক দিয়ে পানি ঝরা সহ অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি করে । সংক্রমণ সাধারণত কিছুদিনে নিজে নিরাময় হয়, কিন্তু শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী মহিলা, অথবা পূর্ব-উল্লেখিত রোগ থাকা ক্ষেত্রে এটি গুরুতর রূপ নিতে পারে ।
মৌসুমী জ্বর — কারণ ও লক্ষণ
কারণ
- ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (প্রধানত Influenza A ও B) এর সংক্রমণ।
- এই ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন: কাশির ধুলো, নাক-মুখের স্পর্শ, বা সংক্রমিত পিন্ড স্পর্শে ।
- অধিক ভিড়, খোলা জানালা না থাকা, দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা—এসব সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় ।
লক্ষণ
- উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর), শুষ্ক কাশি, গলা ব্যথা, মাথা ও পেশী ব্যথা, ক্লান্তি, নাক দিয়ে পানি ঝরা ।
- উপসর্গ সাধারণত ১-২ সপ্তাহে চলে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘতর হতে পারে।
প্রতিরোধের কার্যকর উপায়
১. করোনা টিকা নেওয়া (Annual Flu Vaccination)
- সারা বিশ্বে সেরা প্রতিরোধ হল প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নেওয়া। এটি গুরুতর জ্বর, হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
- CDC অনুযায়ী, ৬ মাস বা তার বেশি বয়সের সকলের জন্য প্রতি মৌসুমে টিকা নেওয়াই সেরা পদক্ষেপ CDC।
- বাংলাদেশে এখনও জাতীয় পর্যায়ে টিকা প্রয়োগ নেই, তবে হজ যাত্রীদের জন্য সরকার নির্দিষ্টভাবে বিনামূল্যে সেবা প্রদান করে থাকে।
২. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও হাইজিন বজায় রাখা
- নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে (বা অ্যালকোহল ভিত্তিক স্যানিটাইজার দিয়ে) হাত ধোয়া ।
- চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ এড়িয়ে চলা ।
- হাঁচি বা কাশি মুখ ও নাক ঢেকে (টিস্যু বা কনুই দিয়ে) — পরবর্তীতে টিস্যু দারুনভাবে ফেলা ।
- অসুস্থ ব্যক্তির কাছাকাছি না যাওয়া, ভিড় এড়িয়ে চলা, ঘরে যথেষ্ট বায়ু চলাচল রাখা ।
৩. সেতোন—জীবনধারা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়ন
- পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাদ্য (ফল ও সবজি বেশি), নিয়মিত শারীরিক চর্চা—এসব প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় করে ।
- ধূমপান এড়িয়ে চলা, কারণ এটি ইনফ্লুয়েঞ্জার ঝুঁকি ও গাম্ভীর্যতা দুইই বাড়ায় ।
৪. দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা
- উপসর্গ শুরু হলে OTC ওষুধ (জ্বরমুক্তি, কাশি উপশম ইত্যাদি) ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে গুরুতর উপসর্গ হলে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি ।
- উচ্চ ঝুঁকির ক্ষেত্রে (যেমন প্রথম ৪৮ ঘণ্টায়), অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (যেমন ওসেলটামিভির বা জ্যানামিভির) সাশ্রয়ী হতে পারে—বিশেষ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহৃত হয় PMC।
৫. উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর টিকা (Global Recommendations)
- WHO অনুসারে, গর্ভবতী মহিলা, শিশু, প্রবীণ, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত এবং স্বাস্থ্যসেবকরা প্রথমেই টিকার জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত +1।
- বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে টিকা গ্রহণের হার খুবই কম (১৩.৮%), যা বাড়ানোর প্রয়োজন ।
প্রশ্ন–উত্তর সেকশন (FAQs):
- প্রশ্ন ১: কবে মৌসুমী জ্বরের টিকা নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর?
উত্তর: সাধারনত সেপ্টেম্বর–অক্টোবর সময়, তবে সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাইরাস সক্রিয় থাকলে পরে টিকাও উপকারী হতে পারে। - প্রশ্ন ২: হাত ধোয়া কি ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে সহায়ক?
উত্তর: হ্যাঁ, হাতের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে, তাই নিয়মিত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ । - প্রশ্ন ৩: অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ কেমন কাজ করে?
উত্তর: উপসর্গের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহৃত হলে এটি সংক্রমণ এবং উপসর্গ কমাতে কার্যকর হতে পারে PMC। - প্রশ্ন ৪: বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ কি টিকা পেতে পারে?
উত্তর: বর্তমানে বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা প্রদান করা হয় না, শুধু হজ যাত্রীদের জন্য এটি বিনামূল্যে পাওয়া যায় ।
উপসংহার
মৌসুমী জ্বর থেকে সুরক্ষা পেতে আপনার টিকার পাশাপাশি নিয়মিত হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশিতে সতর্কতা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহনের সংমিশ্রনী ব্যবস্থা সবচেয়ে কার্যকরী।
1jlobd